শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ন

সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে নারী ও শিশু আদালতের শরনাপন্ন ঠাকুরগাঁওয়ের রিনা

সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে নারী ও শিশু আদালতের শরনাপন্ন ঠাকুরগাঁওয়ের রিনা

অন্তর রায় প্রিন্স, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিলো না ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি এনামুল ও রিনা দম্পতির। বার বছরের সংসার জীবনে তাদের দুটি কন্যা সন্তানও জন্ম নেয়।কিন্তু এরই মধ্যে রিনার উপর কূ-নজর পড়ে প্রতিবেশি মুদি দোকানদার মো: বইজু ওরফে বজির(৫০) এর। তার দোকানে খরচ নেওয়ার সুবাদে তাকে প্রায় সময়ই নানা রকম কু-প্রস্তাব দিতে থাকে বজির।একপর্যায়ে তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ঘরে বউ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় প্রতারক বজির।তারপরও সে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে বজির তার পুর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে তার সংসার করার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে এবং তাঁর পূর্বের স্বামীকে তালাক দেওয়ার সব বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেয়।এতে প্রতারক বজিরের ছলনা না বুঝতে পেরে তার পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে দেয় হতদরিদ্র রিনা।পরবর্তীতে রিনা গত বছরের(২০১৮ সালের) ফেব্রুয়ারী মাসে তার ৫ বছর বয়সী শিশু কন্যা এরিনকে সাথে নিয়ে শহরের হাজীপাড়ায় বজিরের ভাড়া করা বাসায় উঠে নতুন করে সংসার শুরু করে।এর আগে বজির তাকে ষ্ট্যাম্পে পাঁচ জায়গায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয় ও পূর্বের স্বামীকে তালাক দেওয়া হলো মর্মে কবুল করায় এবং দুইজন স্বাক্ষী ও একজন উকিল পরিচয় দিয়ে দুই লক্ষ টাকা দেন মোহরানায় রিনাকে বিয়ে করে।এরপর থেকে প্রতি রাতেই বজির তার সাথে বৈধ স্বামী হিসেবে রাত কাটাতে থাকে।একপর্যায়ে রিনা গর্ভবতী হয়ে পড়লে সে বজিরকে ভাড়া বাসা বাদ দিয়ে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তার নিজ বাসায় তুলতে বলে।কিন্তু চতুর বজির আজ-কাল করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে।এভাবে সময় ক্ষেপন করতে করতে একপর্যায়ে রিনার ভরণপোষণের সকল খরচ বন্ধ করে দেয় প্রতারক বজির।উপায় না পেয়ে রিনা তার বাবার বাড়ীতে গিয়ে উঠে এবং গত ২ ফেব্রুয়ারী’১৯ তারিখে স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের মর্যাদার দাবিতে বজিরের বাড়ীতে গেলে তার ছেলে রাজু ও জিয়াউর রহমান নামে এক আত্মীয় রিনাকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।এসময় তাদের প্রহারে অজ্ঞান হয়ে পড়লে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।পরে সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় আবারও বাবার বাসায় গিয়ে উঠে রিনা।এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের আশায় গতমাসের ৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দেন রিনা।কিন্তু সেখানেও ঘটে বিপত্তি, পুলিশও আসামীর দ¦ারা প্রভাবিত হয়ে মামলা রজ্জু না করে আসামীর সহিত সমঝোতার প্রস্তাব দেন।সে মোতাবেক গত ১৪/০২/১৯ ইং তারিখে ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মোতালেব এর স’মিলে রিনার ছোট মেয়েকে জিম্মি করে স্থানীয় ভুট্টো নামে এক সাংবাদিক দ্বারা বজিরের কথা মতো তাদের শেখানো কথা রিনার মুখ দিয়ে বলিয়ে তা ভিডিও করে।এছাড়াও রিনার ৫ বছর বয়সী শিশুকন্যাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ১০০টাকা মুল্যের অলিখিত ৩টি ষ্ট্যাম্পে তার জোরপুর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়।এমন অভিযোগে স্বামী-সংসার ও সম্মান সবকিছু হারিয়ে গর্ভে আসা অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও ন্যায় বিচারের আশায় ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে হতদরিদ্র পরিবারের রিনা।এ বিষয়ে মামলার আইনজীবি এ্যাডভোকেট মো: এনায়েতুর রহমান জানান, মেয়েটির সাথে চরম অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে।যেহেতু পিতৃত্বের পরিচয়ের বিষয় সেহেতু ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমেই বোঝা যাবে আসলে সন্তানটি কার? তবে আমরা আশাবাদি আদালত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাদীনিকে ন্যায় বিচার প্রদান করতে সহায়ক হবেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com